এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ কি কি

আপনি কি জানেন এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি? এলোভেরা দিয়ে রূপচর্চা করতে ভয় পাচ্ছেন?আমাদের মাঝে অনেকেই ভাবে যে এলোভেরা দিয়ে রূপচর্চা করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আপনার মনেও যদি একই সন্দেহ থাকে,তবে চলুন জেনে নেয়া যাক, অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা সমুহ কি কি

বাংলায় আইটির আজকের এই পোস্ট আপনাদের সাথে অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ এবং অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হয় কি না এসব তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে অ্যালোভেরার আদ্যোপান্ত সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এলোভেরা কি?

অ্যালোভেরার উপকারিতা

এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী বিশেষ গুণাবলী সম্পূর্ণ একটি উপকারী ঔষধি গাছ। এর পাতার সবুজ অংশের ভিতরের স্থিতিস্থাপক জেলির ন্যায় অংশটির মূল উপাদান হলো পানি। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম,সোডিয়াম,জিংক,আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড,এবং ভিটামিন- এ, বি- 6, বি -2 ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। যা আমাদের মানবদেহের নানান সমস্যা প্রশমন ও প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। চলুন দেখে নিই অ্যালোভেরার উপকারিতাগুলো কি কি?

এলোভেরার উপকারিতাগুলো কি কি?

এলোভেরার উপকারিতা

শরীরের বাহ্যিক কিংবা অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূরীকরণে এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর গুণের সীমা পরিসীমার অতীত। রূপচর্চা কিংবা এজমা, ড্যানড্রাফ, সেরিয়াসিসের মত রোগের চিকিৎসায় অ্যালোভেরা ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এতে বিশেষ হাইড্রেটিং ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় এর নিয়মিত ব্যাবহারে ত্বক এবং চুলকে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। এতে অত্যাধিক মাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি বিউটি প্রোডাক্ট হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়। অ্যালোভেরা স্ট্রোকের ঝুকি কমাতেও সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও, অ্যালোভেরা এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এগুলো নিম্নে উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক উপকারি
  • চুলের যত্নে ঘৃতকুমারি অনেক কার্যকরী
  • অ্যালোভেরা খেলে বীর্য ঘন হয়
  • নাইট ক্রিম হিসেবে বহুল ব্যবহৃত
  • সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে

ওজন কমাতে এলোভেরার উপকারিতা

অনেকেই আছেন যারা নিজের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত। প্রপার ডায়েট মেনটেইন করতে পারছেন না সময়ের অভাবে।তাদের জন্য একটি কার্যকরী এবং সল্প সময় সাপেক্ষ উপাদান হলো এলোভেরার জুস। ওজন কমাতে এলোভেরার জুস একটি বিশেষ কার্যকরী উপাদান। কোনো ঝামেলা ছাড়াই আপনার কয়েক মিনিটেই বানিয়ে নিতে পারবেন এই জুসটি। রোজ দিনের শুরুতে এক গ্লাস এলোভেরার গুস আপনার শরীরের চর্বি গলিয়ে দিতে সাহায্য করবে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বাংলায় আইটি

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অ্যালোভেরার উপকারিতা

বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস আমাদের কাছে পরিচিত একটি রোগ। নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকল নারী পুরুষ উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগটি একবার আপনার শরীরে বাসা বাঁধলো তার নিরাময় করা অসম্ভব। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ডায়াবেটিস মাত্রা কম কিংবা বেশি হলে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি নিরাময় না হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব । যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অ্যালোভেরার রস একটি কার্যকরী উপাদান। নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে এটি রক্তে বিদ্যমান গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে আনে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এলোভেরার কার্যকারিতা

হজম শক্তিতে কোনো প্রকার ত্রুটি হলে ওজন বৃদ্ধি, কষ্টকাঠিন্য এবং নানা পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের দেহে হজম প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা একটি কার্যকরী উপাদান। এর অন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পাকস্থলীকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করে। প্রতিদিন সকালে পানি, চিনি বা গুরের সরবতের সাথে অ্যালোভেরার রস পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে।

হার্ট ও দাতের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা

এলোভেরার রস রক্তে উপস্থিত কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কম হয়। এছাড়াও এটি দেহ থেকে দূষিত রক্ত নিষ্কাশিত করে দেয়। এতে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। ডেন্টিস্টরা দাত ও মাড়ির ব্যাথা এবং ক্ষত নিরাময়ে এলোভেরা জেল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ত্বকের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা অতুলনীয়। সুস্থ এবং বিশুদ্ধ ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা স্থায়ীভাবে কার্যকরী। অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক বা অ্যালোভেরা জেল ত্বকের যত্নে অত্যধিক জনপ্রিয়। অ্যালোভেরা শুষ্ক ত্বক কে সজীব করে তোলে।ত্বকের চুলকানি, রোড পুড়ে যাওয়া, মুখের ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।কোনো ফেসপ্যাক ছাড়াও সরাসরি অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ, উজ্জ্বল ও নরম হয়। নিচে কিভাবে অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক তৈরি করবেন টা দেখানো হলো –

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা ফেসপ্যাক

উপকরণ :

  • ১ চামচ এলোভেরা জেল
  • ১/২ চামচ অলিভ ওয়েল
  • ১ চামচ মধু

প্রথমে ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন এবং এতে ১ চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর ১/২ চামচ অলিভ ওয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর ফেসপ্যাকটি মুখে এবং গলায় লাগিয়ে নিয়ে ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত ফলাফল পেতে সপ্তাহে অন্তত একবার এই ফেসপ্যাক টি ব্যাবহার করুন। এই ফেসপ্যাকটি ব্যাবহার করলে আপনার ত্বককে নরম, উজ্জ্বল এবং মসৃণ হতে সাহায্য করবে।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা

ত্বকের পাশাপাশি চুলের যত্নে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। এর ব্যাবহারের ফলে স্কাল্পের পি এইচ মাত্রা ঠিক থাকে এবং খুশকির সমস্যা রোধ করে। চুলের শুষ্কতা বা স্ক্যাল্পের চুলকানি থেকে মুক্ত করতে অ্যালোভেরা জেল এর খুবই কার্যকরী। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া রোধে করে ও খুশকির বিস্তারও রোধ করে এছাড়াও এটি চুলকে সাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। নিচে কিভাবে এলোভেরা দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করা যায় তা দেখানো হলো-

উপকরণ :

  • ৩ চামচ এলোভেরা জেল
  • ১টি ডিমের সাদা অংশ
  • ১/২ চামচ আমন্ড অয়েল

প্রথমে একটি বাটিতে ৩ চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে সেটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে তাতে ১/২ চামচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে আবারও ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে যেনো হেয়ারপাকটি দেখতে ক্রিমি একটা টেক্সচার আসে। এরপর ঘুমোতে যাবার আগে এই প্যাকটি আপনার চুলের স্ক্যাল্পে এবং অগায় ভালো করে ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে পড়ুন এবং সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন।

এই প্যাকটি রাতে ব্যাবহারের ফলে পুরো রাত আপনার চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করতে সাহায্য করবে। এতে আপনার চুল নরম, উজ্জ্বল এবং মসৃণ দেখাবে। এছাড়াও আপনার চুলের খুশকি দুর করবে, চুলের গোড়া মজবুত করবে , চুল পড়া রোধে করবে এবং এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের আদ্রতা বজায় রাখবে এবং চুলকে সাস্থ্যজ্জ্বল ও ঝলমলে করে তুলতে সাহায্য করবে। ভালো ফলাফলের জন্য এই মাসে অন্তত ২-৩ বার ব্যাবহার করবেন।

ঠোঁটের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা

ঠোঁটের রং উজ্জ্বল করতে কিংবা ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতে এলোভেরা ব্যাবহার করা যায়। এর ব্যাবহার ঠোঁট নরম ও মসৃণ করে তোলা যায়। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল হয়ে যাবে। এলোভেরা দিয়ে কিভাবে ঠোঁটের রং উজ্জ্বল করবেন –

উপকরণ :

  1. ১ চামচ এলোভেরা জেল
  2. ১/২ চামচ চালের গুঁড়া
  3. ১/২ চামচ অলিভ অয়েল

একটি পাত্রে ১ চামচ এলোভেরার সাথে ১/২ চামচ চালের গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর এর মধ্যে ১/২ চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। এবং আস্তে আস্তে এই মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন এবং ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২ বার এই মিশ্রণটি ব্যাবহার করুন।

এলোভেরার অপকারিতা

এলোভেরার অপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসকগণ বলেছেন, “এলোভেরা জেল নিরাপদ যখন এটি ঔষধ বা জেল আকারে চামড়ায় প্রয়োগ করা হয়।”

কিন্তু অ্যালোভেরা জেল যখন প্রাকৃতিকভাবে বের করা হয় তখন ভুলবশত এর রসালো অংশের সঙ্গে অ্যালো লেটেক্স নামক রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যায় যা মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এটি এলোভেরার পাতায় বিদ্যমান থাকে যার রং হলুদ। গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের এটি ব্যাবহার করা ঠিক নয়। কারণ এটি তাদের সাস্থের জন্য ঝুঁকি স্বরূপ প্রমাণিত হতে পরে।

অ্যালোভেরার জুস বা রস অধিক পরিমাণে খাওয়া আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই সুফল বয়ে আনে না। এটির অতিরিক্ত সেবনের ফলে আপনার কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। যেহেতু এটি রক্ত বৃদ্ধি কারক সেই অনুসারে পরিমাণ অনুযায়ী সেবন করাই ভালো। এছাড়াও অতিরিক্ত এলোভেরার রস খেলে ডায়রিয়াসহ আরো কিছু রোগব্যাধি আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

বাংলায় আইটির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও, এলোভেরা দিয়ে আপনি কি কি কাজ করতে পারবেন ও এটি আমাদের ত্বকের এবং চুলের যত্নে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি পোস্টটি আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। এমন স্বাস্থ্য ও রূপচর্চা বিষয়ক পোস্ট পড়তে প্রতিদিন বাংলায় আইটি ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আল্লাহ হাফেয।

Leave a Comment