কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্ট। আপনি যদি কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে এই পোস্ট থেকে কম্পিউটার সম্পর্কে সকল তথ্য বিস্তারিত জানতে পারবেন। কম্পিউটার এর প্রকারভেদ এবং সংজ্ঞা নিয়ে স্কুলে পরিক্ষায় বিভিন্ন প্রশ্ন এসে থাকে। আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েন, তবে কম্পিউটার বিষয়ক সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

কম্পিউটার কাকে বলে?

কম্পিউটার কাকে বলে

গ্রিক শব্দ compute শব্দ থেকে computer শব্দের উতপত্তি। Compute শব্দের অর্থ হচ্ছে গণনা করা। অর্থাৎ, Computer শব্দের অর্থ হচ্ছে গণনা করা যন্ত্র। যে যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত ইনপুট নিয়ে সেগুলো প্রসেস করে চাহিদামতো আউটপুট নেয়া যায়, তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যায় তাকে কম্পিউটার বলে। কম্পিউটার এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কাজ করে থাকি। যেমন : গান শোনা, ভিডিও দেখা, ছবি দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ করা ইত্যাদি।

কম্পিউটার কত প্রকার কি কি?

কম্পিউটার এর বৈশিষ্ট্য এবং এর কাজের উপর নির্ভর করে কম্পিউটার ৩ প্রকার হয়ে থাকে। নিচে ৩ প্রকার কম্পিউটার কি কি এবং সেগুলোর নাম উল্লেখ করে দিলাম।

  • এনালগ কম্পিউটার
  • ডিজিটাল কম্পিউটার
  • হাইব্রিড কম্পিউটার

উপরে উল্লিখিত ৩ ধরণের কম্পিউটার এর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। তো চলুন, এই কম্পিউটারগুলোর কাজ কি এবং প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা যাক।

এনালগ কম্পিউটার কাকে বলে?

এনালগ কম্পিউটার হচ্ছে একটি পুরনো কম্পিউটার সিস্টেম, যা দিয়ে এনালগ ডাটা ইনপুট এবং বিশ্লেষণ এর কাজ করা হয়ে থাকে। এনালগ কম্পিউটার এর সাহায্যে সাধারণত, ক্রমাগত পরিবর্তন হয় এমন ভৌত পরিমাণ যেমন – , বৈদ্যুতিক, হাইড্রোলিক, যান্ত্রিক ইত্যাদির গানিতিক পরিবর্তন নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এনালগ কম্পিউটার মূলত গণনা এবং পরিমাপ এর কাজ করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন – ওয়েব পেজ কি

নিচে কিছু এনালগ কম্পিউটার এর উদাহরণ উল্লেখ করে দিলাম।

  1. থার্মোমিটার
  2. মোটর গাড়ির স্পিডোমিটার
  3. স্লাইড রুল
  4. এনালগ ঘড়ি
  5. অপারেশনাল অ্যাম্প্লিফায়ার

ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে?

ডিজিটাল কম্পিউটার বিভিন্ন ডিভাইস এর মাধ্যমে ইনপুট নিয়ে সেই তথ্য এবং উপাত্ত প্রসেসিং করে অন্য সকল ডিভাইস এর মাধ্যমে আউটপুট প্রদান করে থাকে। ডিজিটাল কম্পিউটার মূলত বাইনারি সংখ্যা ০ এবং ১ এর মাধ্যমে সকল হিসেব-নিকেশ করে থাকে। অর্থাৎ, ডিজিটাল কম্পিউটার ০ এবং ১ এর মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করে থাকে।
বাংলায় আইটি
বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইস থেকে আমাদের দেয়া ইনপুটগুলোকে বাইনারি সংখ্যা ০ এবং ১ এ রুপান্তর করে সেগুলো বিশ্লেষণ করে আমাদের চাহিদামতো আউটপুট প্রদান করে থাকে ডিজিটাল কম্পিউটার।

ডিজিটাল কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

আকার-আকৃতি এবং কার্যক্ষমতার উপর নির্ভর করে ডিজিটাল কম্পিউটার মূলত ৪ ভাগে বিভক্ত। আমরা এখন যেসব কম্পিউটার ব্যবহার করি, সবগুলোই ডিজিটাল কম্পিউটার এর অন্তর্ভুক্ত। ৪ প্রকার ডিজিটাল কম্পিউটার হচ্ছে –

  • সুপার কম্পিউটার
  • মেইনফ্রেম কম্পিউটার
  • মিনি কম্পিউটার
  • মাইক্রো কম্পিউটার

উপরোক্ত ৪ প্রকার ডিজিটাল কম্পিউটার নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তো চলুন, সেগুলো দেখে নেয়া যাক।

সুপার কম্পিউটার কাকে বলে?

আকারের দিক থেকে সবথেকে বৃহৎ কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। সুপার কম্পিউটার পৃথিবীতে থাকা সকল কম্পিউটার এর থেকে শক্তিশালী। এই কম্পিউটার দিয়ে বিভিন্ন রিসার্চ এর কাজ করা হয়ে থাকে। স্পেস স্টেশন, ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ গবেষণা সহ অনেক জটিল কাজে সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পৃথিবীতে এখন অব্দি যেসব সুপার কম্পিউটার রয়েছে, তার মাঝে কিছু কম্পিউটার এর নাম নিচে উল্লেখ করে দিলাম।

  1. CRAY 1
  2. supers xll
  3. JAGUAR
  4. NEBULAE
  5. ROADRUNNER
  6. KRAKEN
  7. JUGENE
  8. PLEIADES
  9. TIANHE-1
  10. Sunway Taihulight

মেইনফ্রেম কম্পিউটার কাকে বলে?

সুপার কম্পিউটার থেকে একটু কম শক্তিশালী কম্পিউটার হচ্ছে মেইনফ্রেম কম্পিউটার। তবে, আকারের দিক থেকে মেইনফ্রেম কম্পিউটার অন্যান্য কম্পিউটার এর থেকে বেশি এবং এই কম্পিউটার এর কার্যক্ষমতা অন্যান্য কম্পিউটার থেকে অনেক বেশি। অর্থাৎ, মেইনফ্রেম কম্পিউটার সুপার কম্পিউটার এর মতো তত বেশি শক্তিশালী না হলেও, সাধারণ কম্পিউটার থেকে কয়েক গুন বেশি শক্তিশালী।

বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, শিল্প-প্রতিষ্ঠানে তথ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করার জন্য মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও কিছু মেইনফ্রেম কম্পিউটার রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে এমন কিছু মেইনফ্রেম কম্পিউটার এর নাম নিচে উল্লেখ করে দিলাম।

  • IBM 370
  • IBM 9100
  • IBM 4341

মিনি কম্পিউটার কী?

সাধারণ কম্পিউটার এর থেকে মিনি কম্পিউটার বড় আকারের হয়ে থাকে। মিনি কম্পিউটার মানে অনেকেই ছোট কম্পিউটার মনে করে থাকেন। কিন্তু, মিনি কম্পিউটার আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে আকারে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। মিনি কম্পিউটার দিয়ে অনেক শিল্প-কারখানা, ল্যাবে গবেষণার কাজ করার হয়ে থাকে। কয়েকটি মিনি কম্পিউটার হচ্ছে – pdp-11, ncrs/9290,ibms/36 ইত্যাদি।

মাইক্রো কম্পিউটার কী?

আমরা যেসব কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করি, সেগুলো হচ্ছে মাইক্রো কম্পিউটার। মাইক্রো কম্পিউটার মানে হচ্ছে ক্ষুদ্র বা ছোট কম্পিউটার। মাইক্রো কম্পিউটার এর আরেক নাম হচ্ছে পার্সোনাল পিসি। এই কম্পিউটারে হার্ড ডিস্ক, এসএসডি, র‍্যাম, মাদারবোর্ড, প্রসেসর, পাওয়ার সাপ্লাই, কী-বোর্ড, মাউস, গ্রাফিক্স কার্ড সহ আরও অনেক কিছু থাকে।

মাইক্রো কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

মাইক্রো কম্পিউটার দুই প্রকার। এগুলো হচ্ছে ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার। আকারের উপর ভিত্তি করে ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার এর মাঝে তফাৎ রয়েছে। শুধু আকার নয়, বরং কার্যক্ষমতার উপরেও ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটার এর মাঝে পার্থক্য বিদ্যমান।

ডেস্কটপ কম্পিউটার

টেবিল এর উপর রেখে যে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাকে ডেস্কটপ কম্পিউটার বলে। ডেক্সটপ কম্পিউটার দিয়ে বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ, পার্সোনাল কাজ করা হয়ে থাকে। এই কম্পিউটারে হার্ড ডিস্ক, এসএসডি, র‍্যাম, মাদারবোর্ড, প্রসেসর, পাওয়ার সাপ্লাই, কী-বোর্ড, মাউস, গ্রাফিক্স কার্ড সহ আরও অনেক কিছু থাকে।

ল্যাপটপ কম্পিউটার

ল্যাপ মানে কোল এবং টপ মানে উপরে। অর্থাৎ, ল্যাপটপ মানে হচ্ছে কোলের উপরে। যে কম্পিউটার কোলের উপরে নিয়ে ব্যবহার করা যায়, তাকে ল্যাপটপ কম্পিউটার বলে। ল্যাপটপ কম্পিউটার এর সবথেকে বেশি সুবিধা হচ্ছে, এটি নিয়ে যেকোনো জায়গায় সহজেই ভ্রমণ করা যায়। ডেস্কটপ কম্পিউটার এর মতো করে ল্যাপটপ কম্পিউটার দিয়েও সকল পার্সোনাল এবং অফিসিয়াল কাজ করা যায়।

এছাড়া, ল্যাপটপ কম্পিউটার এর জন্য অনেক কম জায়গা প্রয়োজন হয়। এটি ছোট ব্যাগে বহনযোগ্য।

হাইব্রিড কম্পিউটার কাকে বলে?

এনালগ কম্পিউটার এবং ডিজিটাল কম্পিউটার এর সংমিশ্রণে তৈরি কম্পিউটার হচ্ছে হাইব্রিড কম্পিউটার। এই কম্পিউটার দিয়ে বিভিন্ন গবেষণার কাজ করা হয়ে থাকে। এনালগ কম্পিউটার দিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো ডিজিটাল কম্পিউটার দিয়ে এনালাইসিস করা হয় যে কম্পিউটার দিয়ে, সেটিই হচ্ছে হাইব্রিড কম্পিউটার। হাইব্রিড কম্পিউটার এর সাহায্যে আবহাওয়ার খবর দিয়ে থাকে।

অর্থাৎ, এনালগ কম্পিউটার দিয়ে তাপমাত্রা এবং বায়ুর চাপ ইত্যাদি পরিমাপ করে সেগুলো ডিজিটাল কম্পিউটার দিয়ে বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার খবর দেয়া হয়ে থাকে।

কম্পিউটারের জনক কে?

চার্লস ব্যাবেজ হচ্ছেন কম্পিউটারের জনক।

পার্সোনাল কম্পিউটার কত প্রকার?

পার্সোনাল কম্পিউটার দুই প্রকার। এগুলো হচ্ছে ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার।

কম্পিউটারে প্রধান চারটি অংশ কি কি?

কম্পিউটারের প্রধান চারটি অংশ হচ্ছে, ইনপুট, মেমোরি, প্রসেসর এবং আউটপুট।

আমাদের শেষ কথা

বাংলায় আইটির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কম্পিউটার কাকে বলে, কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি এই পোস্টটি আপনাকে কম্পিউটার বিষয়ক সকল তথ্য জানতে সাহায্য করেছে। এমন আরও পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

Leave a Comment