থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না? এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। থাইরয়েড কি না জানার কারণে অনেকের মনেই বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম হয়ে থাকে।গর্ভবতী নারীর জন্য থাইরয়েড ঝুঁকিপূর্ণ কি না এমন প্রশ্ন গর্ভবতী মায়েদের মনে এসে থাকে। বাংলায় আইটির আজকের এই পোস্ট আমরা থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না নাকি বাচ্চা হয় এ বিষয়ে ডাক্তার কি বলে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান কি বলে সেটি নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি আপনারা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন, এতে করে থাইরয়েড সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না সেটি নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে চলুন জেনে নিই আসলে থাইরয়েড কি?
এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা
থাইরয়েড কি?
থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না? সেটি নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে চলুন জেনে নিই আসলে থাইরয়েড কি? কেনো এটি গর্ভধারণে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। থাইরয়েড হলো গলার সামনের অংশের দিকে, স্বরযন্ত্রের নিচের দিকের ২ ইঞ্চি লম্বা এইচ আকৃতি বিশিষ্ট একটি গ্রন্থি। এটি অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ গঠন করে, যা দেহে হরমোন উৎপাদন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড হতে নিঃসৃত হরমোনগুলো দেহের শ্বাসকার্য, বিপাক প্রক্রিয়া, ওজন বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি,মস্তিষ্কের বিকাশ, কোলেস্টরলের মাত্রা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখে।
Read more: Infertility Specialist in Dhaka Dr. MD Rafiqul Islam Bhuiyan
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের সমস্যা হলো ২ ধরনের একটি হলো হাইপোথাইরয়েড এবং অপরটি হলো হাইপারথাইরয়েড। আপনারা হয়তো জানেন না যে আমাদের শরীরে থাইরয়েডের স্বাভাবিক মাত্রা কত? আপনাদের বলে দেই মানবদেহে TSH ( থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) এর স্বাভাবিক মাত্রা হলো 0.4 – 4.0 mIU/L। থাইরয়েড দ্বারা ক্ষরিত ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন বা (T3) এবং থাইরক্সিন (T4) টাইরোসিন ভিত্তিক হরমোন। T3 এবং T4 আংশিক আয়োডিন দ্বারা গঠিত। দেহে আয়োডিনের অভাব দেখা দিলে T3 এবং T4 এর উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় এবং গলগন্ড রোগ সৃষ্টি হয়।
থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না?
থাইরয়েড একটি মারাত্মক ব্যাধি। থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্ব নারীর জীবনে বিস্তর এবং ব্যাপক। এর মাত্রার কম বা বেশি হলে গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশু উভয়েরই জীবন শঙ্কার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ নারীদের থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম। অর্থাৎ হাইপোথাইরয়েড রোগীর ক্ষেত্রে ডিম্বাণু গঠন এবং পরিপক্কতার সমস্যার কারণে গর্ভাবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়। মুটিয়ে যাওয়া, অবসাদ ও ক্লান্তি, চুল পড়া, ত্বক খসখসে হয়ে পড়া, পা ও মুখ ফোলা, মাসিকের জটিলতা, বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভপাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, শীত শীত ভাব ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
এছাড়াও মায়ের উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যার পাশাপাশি ভূমিষ্ট সন্তানের স্বাস্থ্য এবং মানসিক বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তবে তার মানে এই না যে থাইরয়েড হলে বাচ্চা হয় না। থাইরয়েড হলেও বাচ্চা হওয়া সম্ভব। বরং গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। থাইরয়েডের TSH মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে থাইরয়েডের রোগীও গর্ভবতী হতে পারেন। তবে থাইরয়েড রোগীকে অবশ্যই একটি পরিকল্পিত নিয়ম অনুসারে গর্ভধারণ করতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাইরক্সিনের ডোজ পূরণ করতে হবে এবং গর্ভধারণের দেড় থেকে দুই মাস অন্তর অন্তর থাইরয়েড টেস্ট করতে হবে। শিশু জন্মগ্রহণ করার সময় বিশেষ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং ভূমিষ্ট শিশুর থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।
গর্ভধারণ বা সন্তান প্রেগন্যান্সির সময় বিশেষ সতর্কতা আবলম্বন করতে হবে। নয়তো গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, অকালে সন্তান প্রসব, বৃদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তান প্রসবের ঝুঁকি থেকে যায়।
এতক্ষণ তো আমরা জানলাম হাইপোথাইরয়েড সম্পর্কে এবার আমরা জানবো হাইপারথাইরয়েড সম্পর্কে। সাধারণত, থাইরয়েড হরমোন মাত্রাতিরিক্ত হলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। যারা হাইপারথাইরয়েড তাদের ডিম্বাণু উৎপাদন ও মাসিক সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে বলে সাধারণত গর্ভধারণ হয় না। তবে প্রথম দিকে হাইপারথাইরয়েডের মতো উপসর্গ বুক ধড়ফড়, গরম লাগা, অস্থিরতা, ঘাম, ওজন হ্রাস আর পরেরদিকে আবার হাইপোথাইরয়েডের মতো উপসর্গ শীত লাগা, শুষ্ক ত্বক, চুলপড়া, ওজন বৃদ্ধি, ধীর ও অবসন্নতা, ক্লান্তি দেখা দেয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে ডিম্বাণু উৎপাদন শুরু হয় এবং হঠাৎ করেই গর্ভধারণ হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডের সমস্যায় কর্বিমাজোল বা মেথিমাজোলের সমন্বয় করে হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই ঔষধের ডোজ চলাকালীন গর্ভধারণ করা যাবে না। তবে দুর্ঘটনাজনিতভাবে গর্ভধারণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পিটিইউ জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হবে। তবে এই ঔষধটি সেবনে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বিশেষ করে মায়ের যকৃতে প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে গর্ভকালীন সময় থাইরয়েড টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা জানেন না যে আপনার থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না! তারাও থাইরয়েড টেস্ট করে নিশ্চিন্ত করতে হবে। যাদের পূর্বে থাইরয়েডের সমস্যা ছিল বা আছে তাদের অবশ্যই পরিকল্পিত পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করতে হবে। বিশেষ করে যাদের ঘন ঘন গর্ভপাত হয় তাদের ও গর্ভধারণকালীন সময়ে সচেতন হতে হবে। উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করলে থাইরয়েডের সমস্যায় ও একটি সুস্থ্য বাচ্চা প্রসব করা সম্ভব।
থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না – FAQ
পুরুষের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না?
পুরুষের থাইরয়েড হলেও বাচ্চা হয়।
থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়?
থাইরয়েড হলে ক্লান্তি, ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, চুল পড়া সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
থাইরয়েড হলে কি খাওয়া উচিত না?
থাইরয়েড হলে সয়াবিন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, কোমল পানীয় খাওয়া উচিত না।
থাইরয়েড কি খেলে ভালো হয়?
আখরোট, ঘি, ফ্লাক্স সিড ও চিয়া সিড খেলে থাইরয়েড ভালো হয়।
থাইরয়েড কি ভালো হয়?
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে এবং ঔষধ সেবন করলে থাইরয়েড ভালো হয়।
পুরুষের থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না?
থাইরয়েড একটি মারাত্মক ব্যাধি। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে থাইরয়েড ভালো হয়। কিন্তু, এই রোগে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। যার ফলে একজন পুরুষ পিতা হতে পারবে না।
হরমোন বেশি হলে কি বাচ্চা হয় না?
হরমোন বেশি হলে বাচ্চা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। হরমোন এর পরিমাণ বেশি হলেও বাচ্চা হবে।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে থাইরয়েড হলে কি বাচ্চা হয় না – এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। থাইরয়েড কি, হাইপো-থাইরয়েড কি, হাইপার-থাইরয়েড কি এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।