ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ডেস্কটপ পিসি কিনতে চাচ্ছেন? পিসি বিল্ড করার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে বুঝতে পারছেন না? বাংলায়া আইটি ওয়েবসাইটের আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ডেস্কটপ পিসি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
শত শত বেকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীর সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি চাকরির প্রস্তুতির পাশাপাশি পার্টটাইম বা ফুলটাইম ঘরে বসে আয় করার জন্যে পছন্দনীয় একটি পেশার নাম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। অনেকে আবার গৃহিণী হওয়ায় নিজের হাত খরচের জন্য ফ্রিল্যান্সিং পেশা কে বেছে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার শখের বশে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেও দিনে দিনে তার আয়ও ছাড়িয়েছে লাখ টাকার উপরে।
তবে নতুনদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগে সবথেকে বেশি যে জিনিসটা জানা জরুরি তা হচ্ছে কোন কাজের জন্যে কোন ধরনের কম্পিউটার বা ডেস্কটপ পিসি কিংবা ল্যাপটপ নির্বাচন করবেন। আর তাই আজকের লেখাটিকে সাজিয়েছি আপনাদের ফ্রিল্যান্সিং এর পিসি বা কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের ধরন এবং কাজের ধরণ অনুযায়ী সঠিক কনফিগারেশনের পিসি কিভাবে বাছাই করবেন তা নিয়ে।
তো চলুন, ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ডেস্কটপ পিসি বানানোর সময় কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে জেনে নেয়া যাক।
এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা
ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ডেস্কটপ পিসি
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে কম্পিউটার বা পিসি কেনার আগে সবার প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি ঠিক ফ্রিল্যান্সিং এর কোন ধরনের কাজ শিখতে চাচ্ছেন। যেমন ধরুন আপনি কি লেখালেখি বা অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স এগুলো শিখতে চাচ্ছেন নাকি ওয়েব ডেভোলপমেন্ট, হোস্ট মার্কেটিং, সাইবার সিকিউরিটি ক্রাইম হেল্প, হ্যাকিং ইত্যাদি বিষয়ের উপরে দক্ষতা অর্জন করতে চাচ্ছেন। আপনার বিষয় নির্ধারণ হয়ে গেলে নিচে আমাদের আলোচনা করা পিসির কনফিগারেশন দেখে নিয়ে আপনি আপনার নিজের জন্যেও একটি কম্পিউটার ক্রয় করতে পারবেন বলে আমি আশা করি।
১. গবেষণা, কন্টেন্ট লেখা এবং মার্কেটিং
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে গবেষণা বলতেই বোঝায় কন্টেন্ট লেখা ও মার্কেটিং, কিওয়ার্ড রিসার্চ, অনলাইন এবং অফলাইন এসইও এবং প্রবন্ধ লেখা, লিড জেনারেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রশাসনিক কাজ, অনুবাদ, আইনিসহায়তা ও গ্রাহকসেবার মতো কাজ ইত্যাদিকে বোঝানো হয়ে থাকে। এই ধরনের কাজের জন্য আপনাকে সাধারণত অনলাইনে নিয়মিত বিভিন্ন তথ্য খুঁজতে হবে।
ফলে আপনি যখন কম্পিউটারে কাজ করবেন তখন আপনাকে কাজ করার সময়ও ব্রাউজারের একাধিক ট্যাব চালু রাখতে হবে। যার কারণে এসব কাজ করার জন্য একেবারে হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে, ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ডেস্কটপ পিসি আবশ্যক। মোবাইল দিয়েও অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, কিন্তু অ্যাডভান্স লেভেলে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন – ব্লগিং কি? ব্লগিং করে আয় করার উপায়
আপনি চাইলে যে কোন দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগসহ ২৫৬ থেকে ৫১২ গিগাবাইট এসএসডিসহ র্যাম ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট সুবিধার কম্পিউটার বা পিসি ক্রয় করতে পারেন আর কেউ যদি মনে করেন যে ম্যাক কম্পিউটার এর মাধ্যমে এই কাজগুলো করবেন তাহলে সেক্ষেত্রে ম্যাকবুক এয়ার বা এন্ট্রি লেভেলের ম্যাক মিনি বা ম্যাকবুক গুলো দুর্দান্ত গতিতে কাজ করবে যা আপনার কাছে সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগবে।
২. আইটি রিলেটেড কাজ
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে জনপ্রিয় ধাপটি হচ্ছে আইটি রিলেটেড। এই বিভাগের কাজগুলো সাধারণত নেটওয়ার্কিং, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, ডেটাবেইস অ্যাডমিন, ডেভঅ্যাপ ইঞ্জিনিয়ার, সিস্টেম আর্কিটেক্ট, ডেটা সিস্টেম অ্যানালিস্ট, ইউআর এল, ইউএল এক্স, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
এই ধরনের কাজ এর জন্যেও আপনাকে হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় না। তবে কাজের পরিমাণ যদি বেশি হয় বা বিশেষায়িত কাজের জন্য অনেকেই আবার বিশেষ সুবিধাযুক্ত হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে আমি বলবো আপনি যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একেবারেই নতুন হিসাবে কাজ শুরু করবেন সেহেতু ৫১২ গিগাবাইট এসএসডি এবং ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট র্যাম সুবিধার মধ্যম মানের যেকোনো কম্পিউটার বা পিসি ব্যবহারই ভালো হবে। তবে এ জন্য অবশ্যই আপনার পিসিতে প্রসেসর ও র্যাম হালনাগাদ করতে সক্ষম মাদারবোর্ড ব্যবহৃত হয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
আরও পড়ুন – কুইজ খেলে টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়
আর যদি ম্যাক কম্পিউটার ব্যবহার করতে চান তাহলে ম্যাক মিনি থেকে শুরু করে ১৬ গিগাবাইট র্যাম সুবিধার ম্যাকবুক প্রোর এন্ট্রি লেভেলের যেকোনো কম্পিউটার বা পিসি বেছে নিতে পারেন।
৩. গ্রাফিক্স ইনটেনসিভ কাজ
ফ্রিল্যান্সিং এর তৃতীয় কাজের ধরন হচ্ছে গ্রাফিক্স ইনটেনসিভ ওয়ার্ক। এই বিভাগের কাজগুলোর মধ্যে আপনি পাবেন বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স, থ্রিডি, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, ভয়েস আর্টিস্ট, সাবটাইটেল এডিটিং, আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, গেম অ্যাসেট ডিজাইনার ও ডেভেলপার ইত্যাদি।
এসব কাজ এর জন্যেও আপনাকে খুব বেশি কনফিগারেশন বা হালনাগাদ প্রযুক্তির কম্পিউটার ব্যবহার না করতে হলেও আমি বলবো অন্ততপক্ষে আপনার পিসিতে যাতে ভালোমানের গ্রাফিক্স কার্ড এবং আকারে বড় মনিটর ব্যবহৃত হয়ে থাকে তা নিশ্চিত করুন।
কেননা এসব কাজের জন্য নির্ভুল রং ব্যবহারের জন্য মনিটরে কালার প্রোফাইল বাছাই করতে হয় যা ছোট স্ক্রিনের পিসি বা কম্পিউটারে সম্ভব নয়। আর তাই আপনি যে ধরনের কাজ করতে আগ্রহী সেই কাজের উপযোগী কম্পিউটার ব্যবহার করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে কেউ যদি মনে করে শুধু 2D প্রযুক্তির গ্রাফিক্সের কাজই করবেন তবে তাহলেও সে যে কোন মধ্যম মানের কম্পিউটারের সাহায্যে বেশ ভালোভাবেই কাজ করতে পারবেন।
এ জন্য মধ্যম মানের যেকোনো প্রসেসরের পাশাপাশি ৫১২ গিগাবাইট এসএসডি এবং ৮ থেকে ১৬ গিগাবাইট র্যাম সুবিধার পিসি বেছে নিন। আবার কেউ যদি 3D বা অ্যানিমেশনের জন্য গ্রাফিক্স ইনটেনসিভ বিষয়ে কাজ করতে চান তবে অবশ্যই হাই এন্ড বা হাই প্রোফাইল প্রযুক্তির প্রসেসরসহ ১৬ থেকে ৩২ গিগাবাইট র্যাম সুবিধার কম্পিউটার বা পিসি ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ডেস্কটপ পিসি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি। ফ্রিল্যান্সিং এর পিসি কিংবা কম্পিউটার যাই কিনুন না কেন খেয়াল রাখবেন পিসিতে যাতে ভালো মানের কিবোর্ড, মাউস, র্যাম, রম এবং গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি যতো ভালো মানের পিসি ই কিনুন না কেন প্রতিদিন কম্পিউটার রিফ্রেশ করা জরুরি।
আর অবশ্যই পিসি কেনার জন্যে বাজেট রাখুন ৪৫-৫০ হাজার রেঞ্জের মধ্যে। তাহলে আশা করা যায় যে এই দামের মধ্যে ভালো মানের একটি ডেস্কটপ পিসি তৈরি করতে পারবেন। আর ডেস্কটপ পিসি, কাস্টম পিসি, কম্পিউটার ও ল্যাপটপের দাম বিডিস্টল থেকে জেনে নিয়ে ক্রয় করতে পারবেন বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে।
তথ্যসুত্র – বিডিস্টল.কম