টিন সার্টিফিকেট এ করদাতাদের যে নাম্বারটি প্রদান করা হয়ে থাকে সেটি সাধারণত ১২ ডিজিটের হয়ে থাকে। তবে অনেকেই সঠিক নিয়মে টিন সার্টিফিকেট আবেদন করতে পারেন না। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আলোচনা করব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যারা নিয়মিত কর প্রদান করে থাকেন তারা সবাই “টিন সার্টিফিকেট” কথাটির সঙ্গে পরিচিত। যারা নিয়মিত আয় করে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছেন তাদের জন্য টিন নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুব বেশি প্রচলিত না হলেও বাংলাদেশের সব নাগরিকদের জন্য টিন সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।
“টিন সার্টিফিকেট” এর পূর্ণরূপ হল টাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার। যারা কর দিয়ে থাকেন তাদের এই নাম্বারের মাধ্যমে সনাক্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশের নাগরিকদের যেমন ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন, তেমনি কর দাতাদের তিন সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।
এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা
টিন সার্টিফিকেট আবেদন
টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। কাগজপত্রগুলো হল:
- আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার অথবা এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
- আবেদনকারীর নাম এবং পিতামাতার নাম উল্লেখ করতে হবে। এটি অবশ্যই এনআইডি কার্ডের সাথে মিল থাকতে হবে।
- আবেদনকারী যদি বিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে তার স্বামী অথবা স্ত্রীর নাম উল্লেখ করতে হবে।
- আবেদনকারীর স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট আবেদন চাইলে আপনি নিজেও করতে পারেন। আবার চাইলে নিকটস্থ কোন কম্পিউটার দোকান থেকেও করতে পারেন। কিন্তু যে মাধ্যমিক করুন না কেন খেয়াল রাখবেন তথ্যগুলো যাতে সঠিকভাবে পূরণ করা যায়। তথ্য গরম মিল থাকলে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে.
আরও পড়ুন – ভিশন রাইস কুকারের দাম
টিন সার্টিফিকেট অনলাইন আবেদন
বর্তমানে টিন সার্টিফিকেট এর আবেদন অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। যা কিছুদিন আগেও রেভিনিউ বোর্ডে দৌড়াদৌড়ি করা লাগতো টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার জন্য। অনলাইনের মাধ্যমে বর্তমানে খুব সহজেই ঘরে বসে এই সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া যায়। এবং এইসব তথ্যসমূহ অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে। এই পদ্ধতিকে ই টিন সার্টিফিকেট বলা হয়ে থাকে। চলুন তাহলে ধাপে ধাপে আলোচনা করা যাক কিভাবে টিন সার্টিফিকেট অনলাইন আবেদন করতে হয়?
আরও পড়ুন – চাকরি থেকে অব্যাহতি পত্র লেখার নিয়ম
ধাপ ১: আবেদন করার জন্য প্রথমে “ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ” এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এখান থেকে রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করুন।https://secure.incometax.gov.bd/Registration/Index আপনারা চাইলে সরাসরি এই লিংকে প্রবেশ করে ও রেজিস্ট্রেশন অপশনে আসতে পারবেন।
ধাপ ২: আপনার সামনে এইভাবে এরকম একটি পেজ ওপেন হবে। এখান থেকে ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। তারপর ধাপে ধাপে “ইউজার আইডি”নামক ঘরে আপনার পছন্দমত একটি নাম্বার বসান। মনে রাখবেন এই পেজের সকল তথ্য গুলো ইংরেজিতে পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৩: এই অপশনে খুব গোপন একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। মনে রাখবেন এই পাসওয়ার্ড যেন কোনভাবে কেউ না জানতে পারে। পরে আবার একই পাসওয়ার্ড রি টাইপ করে বসাতে হবে।
ধাপ ৪: আপনার ইউজার আইডি টি নিরাপদ করার জন্য এখানে একটি প্রশ্ন সিলেক্ট করতে হবে এবং তার উত্তর দিতে হবে। ওয়েবসাইটে ১৯ টি প্রশ্ন দেওয়া থাকবে। আপনি আপনার পছন্দমত একটি প্রশ্ন বাছাই করতে পারবেন।
আরও পড়ুন – ইন্টারনেট কাকে বলে
ধাপ ৫: এই পর্যায়ে আবেদনকারীর দেশের নাম সিলেক্ট করতে হবে। পরবর্তীতে নিজের অপশন গুলোতে আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস থাকলে তা বসাতে হবে। তবে email address না থাকলে বসানোর দরকার নেই। কারণ এটি বাধ্যতামূলক নয়।
ধাপ ৬: এই পেজে যে ক্যাপচা কোডটি পূরণ করতে বলা হবে সেটা উপরের অক্ষরগুলো ভালো করে চিহ্নিত করে নিচের ঘরে বসাতে হবে। অতঃপর, Register বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৭: রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করার পর পরবর্তী পেইজে “মোবাইল এক্টিভেশন” নামে একটি অপশন আসবে। সেখান থেকে এক্টিভেট কোডটি চাওয়া হবে। মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে কোড পাঠানো হলে তা উপযুক্ত ঘরে বসান। নম্বর বসানো হয়ে গেলে “এক্টিভেট” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৮: এক্টিভেট মাধ্যমে ক্লিক করার পর এই পর্যায়ে আপনাকে ইউজার আইডিতে নাম্বার বসাতে হবে। এবং সিক্রেট পাসওয়ার্ডটি প্রবেশ করাতে হবে। নাম্বার গুলো বসানোর পর “Login” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৯: এই পর্যায়ে আপনার সামনে নতুন আরেকটি পেজ আসবে। এখান থেকে “টিন এপ্লিকেশন” অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ১০: এই ধাপে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আবেদনকারীর কাছ থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হবে। এখান থেকে যে তথ্যগুলো যাওয়া হবে সেই তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করার পর “go to next”বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ১১: “Go to Next” বাটনে ক্লিক করার পর পরবর্তী পেজটি ওপেন হবে। এই পর্যায়ে আপনি যেসব তথ্যগুলো এত সময় ইনক্লুড করেছেন সেগুলো আবার চেক করে নিন। সবকিছু সঠিক থাকলে “সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন” বাটনে ক্লিক করুন।
যদি আপনি আপনার সার্টিফিকেটটি দেখতে চান তাহলে এই পেজ থেকে ওপেন করে দেখতে পারেন। যদি সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতে চান তাহলেও এ পেজ থেকে করতে পারেন।
বিভিন্ন কাজে আমাদেরকে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করতে হয়। জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জিপিএফ একাউন্টের ব্যালেন্স সম্পর্কে জানতে পারবো।
টিন সার্টিফিকেট লগইন
আমরা উপরে টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার নিয়ম এবং টিন সার্টিফিকেট লগইন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তিন সার্টিফিকেট লগইন করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন তথ্যগুলো সঠিকভাবে প্রবেশ করাচ্ছেন কিনা।
কারণ এই তথ্যে ভুল থাকলে পরবর্তীতে টিন নাম্বার যখন পাবেন সেটি ব্যবহারে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই টিন সার্টিফিকেট লগইন করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। টিন সার্টিফিকেট লগইন করা হলে ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিজের কাছে রাখা ভালো।
তাহলে যখন আপনার সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে সাথে সাথে বের করতে পারবেন। আর কাছে না থাকলে অনলাইনে ঘাটাঘাটি করতে হবে। সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
Also Read : অনলাইনে স্মার্ট কার্ড চেক
টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা ও অসুবিধা
টিন সার্টিফিকেট এর বিভিন্ন সুবিধা থাকার পাশাপাশি এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করে দেওয়া রয়েছে যে কত টাকা আয় করলে বছরে আপনাকে আয়কর দিতে হবে।
আপনার এই আয় যদি করমুক্ত এর সীমা অতিক্রম করে থাকে তাহলে এই টাকা আপনাকে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এই টাকাগুলো বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনি ব্যাংক থেকে যে লভ্যাংশ পান তার প্রায় দশ শতাংশ কর হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
তবে যদি আপনার টিন সার্টিফিকেট না থেকে থাকে তাহলে প্রায় ১৫ শতাংশ টাকা কর হিসেবে কেটে নেওয়া হবে। যা একটি ভালো এমাউন্ট আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিমাসে কেটে নেওয়া হবে। তাই বলা যায় টিন সার্টিফিকেট এর যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু কিছু অসুবিধা রয়েছে।
শেষ কথা
বর্তমানে যাদের ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে তাদের কাছে টিন সার্টিফিকেট একটি অতি পরিচিত নাম। যারা নিয়মিত আয়কর প্রদান করে থাকেন তাদের আয়কর রিটার্ন করার জন্য অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হয়। তবে শুধুমাত্র আয়কর প্রদান করতে টিম সার্টিফিকেট লাগে এই ধারণা ভুল। বর্তমানে আরো বিভিন্ন কাজে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। তাই আপনার কাছে টিন সার্টিফিকেট থাকা একান্ত জরুরী।
Also Read : জন্ম নিবন্ধন সংশোধন
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, অথবা যারা এই তথ্য অনলাইনে সার্চ করছিলেন আশা করি আজকে রাতে খেলতে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।