মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় জানতে চান? আপনার মুখে কালো দাগ রয়েছে? আপনি কি মুখের ডার্ক সার্কেল নিয়ে চিন্তিত? কী করবেন বুঝতে পারছেন না? আমাদের আজকের পোস্টে মুখের কালো দাগ দূর করার মেডিসিন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই কাম্য। আমরা সকলেই চাই আমাদের ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হোক। এখনকার যুগে টিনেজ থেকে শুরু করে সকলেই ত্বক ফর্সা করতে চায়। মুখের কালো দাগ আপনার চেহারায় মলিনতা সৃষ্টি করে এবং আপনার সৌন্দর্যে বাধা সৃষ্টি করছে। মুখে নানা কারণে দাগ দেখা দিতে পারে যেমন ব্রণের দাগ, মেসতা , ব্ল্যাকহেডস ,ডার্ক সার্কেল ,কেটে যাওয়ার দাগ ইত্যাদি। কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা ছাড়াই মুখের কাল দাগ দুর করতে চান? তাহলে জেনে নিন ঘরোয়া উপায়ে স্থায়ীভাবে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়।
এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা
মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
আমাদের প্রায় অনেকের মুখেই কালো দাগ দেখা যায়। মুখের কালো দাগের অপর নাম হচ্ছে ডার্ক সার্কেল। ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য প্রায় অনেকেই বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করে থাকেন। অনেকেই তো ডার্ক সার্কেল দূর করার মেডিসিন ব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। উল্টো আরও অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। কিন্তু, আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ঘরোয়া উপায়ে ডার্ক সার্কেল দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা যেগুলো সম্পূর্ণ সেফ এবং আপনার ত্বকের কোনো ক্ষতি করবে না।
লেবু দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
আমাদের সকলকেই বিভিন্ন কারণে ঘরের বাহিরে যেতে হয়। এতে রোদ, দূষণ মুখের লোমকূপে ময়লার সৃষ্টি করে এতে দেখা দেয় ব্রণ কিংবা ব্ল্যাকহেডস। মুখের এই কালো দাগ দূর করার জন্য নানা কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যাবহার করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না। আমাদের আশেপাশে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের সুন্দর ও সৃজনশীল করে তুলতে সাহায্য করে। ত্বকের এই ব্ল্যাকহেডস দুর করতে সাহায্য করে থাকে লেবু। যা সবসময় পাওয়া যায়ি১১১!
উপকরণ –
- ১ চামচ বেকিং সোডা
- ২ চামচ লেবুর রস
একটি পাত্রে ১ চামুচ বেকিং সোডার সাথে ২ চামুচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখার পর এক ফালি লেবুর নিয়ে পুরো সার্কেল করে ঘষে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে মুখের লোমকূপের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং মুখের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
মধু দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
মুখের কালো দাগ দূর করতে জাদুকরী উপাদান মধু। প্রতিদিন মধুর ব্যাবহারের ফলে মুখের অতি পুরনো দাগ চলে যায়। মুখের পুড়ে যাওয়া দাগ উধাও হয়ে যায় মধুর ব্যাবহারে। এছাড়াও মধু ত্বকে এনে দেয় সোনালী আভা। যা সকলেই চায়। মধুতে রয়েছে নিরাময় ও অ্যান্টিসেপটিক এর গুন।
উপকরণ –
- ১ চামুচ হলুদ গুঁড়ো
- ২ চামুচ মধু
একটি পাত্রে ১ চামুচ হলুদ গুঁড়ার সাথে ২চামুচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর ২০ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রাতে ঘুমানোর আগে ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন। মধু এবং হলুদ উভয়ে জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।
টুথপেস্ট দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
ঝকঝকে দাঁত পেতে টুথপেস্টের জুড়ি মেলা ভার। তবে টুথপেস্ট দিয়ে মুখের কালো দাগ দূর করা যায় তা হয়তো অনেকেই জানে না। তবে সরাসরি টুথপেস্ট ব্যবহার না করে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যোগে ব্যাবহার করলে দ্রুত মুখের কালো দাগ দূর করা সম্ভব।
উপকরণ
- ১ চামচ টুথপেস্ট
- ১ ফালি লেবু
এক ফালি লেবুর মাঝে এক চামচ টুথপেস্ট লাগিয়ে সার্কেল করে ৪-৫ মিনিট ম্যাসেজ করে ঠান্ডা পানি ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের অতিরিক্ত অয়েল দুর হয়ে যায়। ত্বকে অতিরিক্ত অয়েলের কারণে ব্রণ দেখা দেয় এবং জীবাণুর সৃষ্টি হয়। এই ফেসপ্যাক টি ব্যবহারে পুরনো দাগ অদৃশ্য হবে এবং ব্রণের সমস্যা প্রতিরোধ করবে।
উপকরণ
- ১ চামচ টুথপেস্ট
- ২ চামচ টমেটোর রস
১ চামচ টুথপেস্টের সাথে ২ চামচ টমেটো রস ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর যখন মিশ্রণটি টান টান হয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। খুব দ্রুত আপনার ত্বক ফর্সা হয় যাবে।
ডার্ক স্পট দূর করার উপায়
এখনকার জেনারেশনে ডার্ক স্পট খুব কমন একটা সমস্যা। কিশোরী থেকে রমণী সকলেই স্পটলেস গ্লোরিয়াস স্কিন চায়। তবে নানা কারণে তাদের সৌন্দর্যে ফাটল নিয়ে আসে অ্যাকনি, ট্যানলাইনসের মত ডার্ক স্পটস। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইপারপিগমেন্টেশন বা কালো ব্রণের দাগ , মাত্রাতিরিক্ত সূর্যের এক্সপোজার বা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। এর প্রতিকারের জন্য অনেকেই নানান ক্রিম বা সিরাম ব্যবহার করে থাকি। তবে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে যায়। প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম যেকোনো পণ্য ব্যবহারে খেয়াল রাখতে হবে এটা আপনার হাইপারপিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করতে পারছে কিনা! আপনার ত্বক সংবেদনশীল কিনা!
এটি আপনার ত্বকের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করতে পারছে কিনা! ডার্ক স্পট দুর করতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও এবং পানি পান করতে হবে। ত্বককে সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। রোদে বের হলে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত টেনশনের ফলেও অ্যাকনে দেখা দিতে পারে। ডার্ক স্পট দূর করার উপায় সম্পর্কে আমরা কিছু ঘরোয়া টিপস শেয়ার করবো। ডার্ক স্পট দুর করার জন্য হলুদ একটি সুপরিচিত উপাদান। প্রাচীনকাল থেকেই দাগ দুর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে হলুদের ব্যবহার জনপ্রিয়।
উপকরণ
- ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ১-২ চামচ দুধ
- ১ চামচ লেবুর রস
একটি পাত্রে ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো নিয়ে তাতে ১-২ চামচ দুধ এবং ১ চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে ঘন একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এরপর ফেসপ্যাক টি লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যাবহার করুন। ২ সপ্তাহ জন্য ব্যাবহার করে দেখুন অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
মেয়েদের মুখের কালো দাগ দূর করার ক্রিম
মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য অনেকেই নিজের ত্বকের ধরন, বৈশিষ্ট্য না বুঝে বিভিন্ন ধরণের ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। যার ফলে আমাদের ত্বকের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি করে ফেলি। মানসম্মত নয় এমন যেকোনো পণ্য রূপচর্চা কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য, কিংবা মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য, আমাদের প্রয়োজন এমন কিছু ক্রিম ব্যবহার করা, যেসব ক্রিম আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী এবং পূর্বের তুলনায় আমাদের ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম। নিচে আমি এমন কিছু মেয়েদের মুখের কালো দাগ দূর করার ক্রিম এর নাম উল্লেখ করে দিলাম।
Himalaya CLarina Anti Acne(হিমালয় ক্লারিনা অ্যান্টি-অ্যাকনি ক্রিম)
ত্বক থেকে দাগ দূর করার জন্য এই ক্রিমটি অসাধারণভাবে কাজ করে। এটি ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করে ত্বককে জীবাণুমুক্ত রাখে। এটি মুখের কালো দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। এই ক্রিমে অ্যালোভেরা ,মঞ্জিষ্ঠা এবং কাঠবাদামের গুন রয়েছে। ফলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতক্রিয়া নেই। মুখের কালো দাগ দূর করা এবং উজ্জ্বল করতে চাইলে এই ক্রিমটি ব্যবহার করতে পারেন।
Clinique Acne Solutions Spot Healing Gel (ক্লিনিক অ্যাকনি স্যুলিশন স্পোট হেলিং জেল)
যাদের মুখে ব্রনের মাত্রা অতিরিক্ত। একেবারেই বিব্রতকর অবস্থা তাদের জন্য এই ক্রিমটি অসাধারণভাবে কাজ করবে। যেকোনো প্রকার দাগ খুব দ্রুত কমিয়ে আনে এই ক্রিমটি। ত্বকে লাগানোর সাথে সাথেই এটি কাজ করতে শুরু করে। যদি আপনারা মুখের কালো দাগ দূর করার ক্রিম ব্যবহার করতে চান তাহলে এই ক্রিমটি ব্যবহার করুন।
Richfeel Calendula Anti Blemish Cream (দ্যা রিচফিল অ্যান্টি ব্লেমিস ক্রিম)
আপনি যদি আপনার ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ দূর করে উজ্জ্বল এবং দীপ্তিময় হতে চান তাহলে প্রতিদিন রাতে এটি ব্যবহার করবেন। এটি আপনার ত্বকের যেকোনো কালো দাগ দূর করে দেবে। মুখের কালো দাগ দূর করার ক্রিম হিসেবে এটি জনপ্রিয়।
আমাদের শেষ কথা
বাংলায় আইটির আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টে উল্লিখিত মুখের কালো দাগ দূর করার ক্রিমগুলো ব্যবহার করে কিংবা ঘরোয়া উপায়ে মুখের ডার্ক স্পট দূর করার নিয়ম অনুসরণ করে সহজেই আপনার ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে পারবেন।