সকালের শুরুতেই এক কাপ কফি মানেই যেন এনার্জি বুস্ট! অনেকেই মনে করেন, কফি না খেলে ঠিকভাবে ঘুম কাটে না, আবার কেউ কেউ বলেন, এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু সত্যটা কী? গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে কফি পান করা হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও লিভারের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে। তবে অতিরিক্ত কফি পান করলে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক ও ঘুমের ব্যাঘাত।
বাংলাদেশে কফির দাম ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনশীল, এবং কফির মান ও উৎপত্তি অনুযায়ী এটি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কফির দাম আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের তুলনায় কম হলেও, ভালো মানের কফির জন্য বেশি খরচ করতে হয়।
আজকের ব্লগে আমরা জানবো সকালে কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, এবং কিভাবে এটি আমাদের শরীর ও মনের উপর প্রভাব ফেলে।
এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা
সকালে কফি খাওয়ার উপকারিতা
এনার্জি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে
কফির ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ঘুমভাব দূর করে। ফলে কর্মক্ষমতা ও মনোযোগ বাড়ে, যা বিশেষ করে সকালে কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। বয়স বাড়লে আমাদের মস্তিস্কের দক্ষতা হ্রাস পায়। মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সকালে কফি পান করতে হবে। এতে মস্তিষ্কের স্মৃতি শক্তি ও কার্যকারিতা বাড়বে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
পরিমিত কফি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে”—অধ্যাপক থমাস লুশার (ইউরোপীয় হার্ট জার্নাল)। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ১-২ কাপ কফি হার্টের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে
এক্স ওয়াং এবং অন্যান্য গবেষকদের গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত কফি পান টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৫%-৫০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
লিভারের জন্য ভালো
কফি লিভারের প্রদাহ কমায়, যা ফ্যাটি লিভার ও সিরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চোখের জন্যও ভালো
কফি পানে আমাদের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে
ব্ল্যাক কফির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি আপনার শারীরিক পারফরম্যান্সকে দারুণভাবে উন্নত করে এবং একটি ওয়ার্কআউট করার সময় শতভাগ অ্যাক্টিভ থাকতে সহায়তা করে। এই কারণেই জিমের প্রশিক্ষকরা ব্যায়াম করতে আসার আগে ব্ল্যাক কফি খেতে বলেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
ক্যাফেইন মেটাবলিজম বাড়িয়ে চর্বি পোড়ানোর হার বাড়ায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে।
সকালে কফি খাওয়ার অপকারিতা
রক্তচাপ বাড়াতে পারে
ক্যাফেইন সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা
খালি পেটে কফি পান করলে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়, যা গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালার কারণ হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা হতে পারে
সন্ধ্যার পর কফি পান করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে অনিদ্রার সমস্যা তৈরি করতে পারে।
হাড়ের ক্ষতি হতে পারে
অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীর থেকে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, যা হাড় দুর্বল করতে পারে।
ক্যাফেইন আসক্তি হতে পারে
নিয়মিত কফি পান করলে ক্যাফেইন নির্ভরতা তৈরি হতে পারে, ফলে হঠাৎ কফি বন্ধ করলে মাথাব্যথা ও ক্লান্তি হতে পারে।
সকালে কফি খাওয়ার সঠিক সময়
- সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে কফি পান করা সবচেয়ে ভালো।
- খালি পেটে কফি না খাওয়াই উত্তম, কারণ এটি গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে।
- রাতে কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন, যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
কফিতে দুধ ও চিনি যোগ করা কি ভালো?
- চিনি যোগ করলে এটি ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, তাই চিনি পরিহার করাই ভালো।
- দুধ মেশালে কফির পুষ্টিগুণ খুব একটা পরিবর্তন হয় না, তবে এতে ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে।
উপসংহার
সকালে এক কাপ কফি এনার্জি বাড়ায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে, হৃদযন্ত্র ও লিভারের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে অতিরিক্ত কফি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক ও অনিদ্রার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় কফি পান করাই উত্তম।